মা-বাবা রাজি না থাকলে, তাদেরকে না জানিয়ে বিয়ে করা যাবে কি?আওয়ার ইসলমা ডেস্ক: নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানতে চেয়েছেন, আমার বর্তমান বয়স ২০ বছর । আমি বর্তমানে বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি । ২০১৫ সালের দিকে একটি মেয়ের সাথে ফেসবুকে আমার পরিচয় হয় , তারপর তার সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে । তারপর একদিন আমরা বিয়ে করে ফেলি । বিয়েতে ওদের বাসায় ভাড়া থাকে এক চাচি আসছিল আর তার ছেলের বৌ আসছিল ।

আমি আর আমার তিন বন্ধু গিয়েছিলাম । বিয়ে করে ফেলেছিলাম । তারিখটা আমার মনে আছে ১৬/০৮/২০১৫ ছিল । আমি জানতাম মেয়ের বাবার অনুমতি ছাড়া বিয়ে হয় না । কিন্তু তখন আমার মাথা কাজ করতেছিল না । তাই এমন কাজ করেছিলাম । আমি ঐ মেয়েকে ছাড়তেও পারব না । আমি আমার বাসায় ওর কথা বলেছি আর সে তার বাসায়ও বলেছে শুধু অর মাবাবাকে ছাড়া । আমি ওকে পারিবারিক ভাবেই বিয়ে করব বলে ঠিক করে রেখেছি ।

এই কাজ টা আমাকে প্রতিনিয়ত ভাবায়, আমি কি করলাম! আর ভাবি ওকেও আমি ছাড়তে পারব না ।

আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরি । সারাদিন ভাবি আমার ইবাদত আল্লাহর কাছ কবুল হচ্ছে তো! আমি সবসময় ভাবি খারাপ কাজ ছেড়ে দিব ছেড়ে দেইও। কিন্তু আবার মাঝে মধ্যে করে ফেলি । আল্লাহর কাছে সবসময় বলি, আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দাও । আমাকে সিরাতুল মুস্তাকিমের উপর চলার তৌফিক দেও । তারপরেও কেন জেন আমি গুনাহ করে ফেলি । তাহলে কি আমার ইবাদত আল্লাহ এর কাছে কবুল হচ্ছে না ? আল্লাহ আমাকে অবশ্যই ক্ষমা করবে এই আসায় সবসময় থাকি ।

আমি জানি জেনা করা কবিরাহ গুনাহ । আমি ওর সাথে শুধুমাত্র নারী পুরুষের যৌনাঙ্গ মিলিত হওয়া বাদে আর যা হয় , তা সব করেছি । এখন আমার মনে এই কথা সব সময় খটকা লাগে আমি জেনা করেছি আমি অনেক বড় অপরাধ করেছি অনেক বড় গুনাহ করেছি । আমি আর এইরকম গুনাহ করতে চাই না । আমি ঐ মেয়েকেও বলেছি যে, দেখ তোমাকে আমার বাসায় উঠানোর আগে এইসব করা আমার ঠিক হয় নাই। আমি অনেক বড় গুনাহ করে ফেলেছি । আমার জন্য আল্লাহ এর কাছে দোয়া কর আল্লাহ যেন আমাকে মাফ করে দেয় । আমি জানি, বেগানা নারীকে দেখা পাপ , আমি এও জানি জেনা করা কবিরা গুনাহ । হুজুর আমি ঐ মেয়েকে ছাড়তেও পারব না । আমি ওকে পারবারিক ভাবে বিয়ে করতে চাই ।

এই মুখ দিয়ে আমি কিভাবে আল্লাহ এর কোরআন পাঠ করব । আমি যে অনেক বড় গুনাহ করে ফেলেছি । আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবে নিশ্চয়ই । হুজুর আমার জন্য দোয়া করবেন । হুজুর সবসময় গুনাহ থেকে বাঁচার সর্বশ্রেষ্ঠ পথ আমাকে বলে দিন ।

আর হুজুর ঐ মেয়েটিকে কিভাবে আমি পারিবারিকভাবে সবার সম্মতিতে বিয়ে করতে পারি সেই উপায়টিও বলবেন । আমি যেন আমার নফসকে শাসন করে চলতে পারি আল্লাহ যেন এইরুপ শক্তি দেয়। আমার জন্য দোয়া করবেন ।

সবশেষে আমার বর্তমান অবস্থায় আমার করণীয় সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থাটি বলবেন । আবারও বলছি হুজুর আমার জন্য দোয়া করবেন আল্লাহ যেন আমাকে ক্ষমা করে দেয় । আমি খুবই অনুতপ্ত । আল্লাহ আপনার উপর রহমতের শান্তি বর্ষণ করুক । ( আমীন )

উত্তর-

যদি আপনি প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম দুইজন পুরুষ সাক্ষীর সামনে ইজাব কবুলের মাধ্যমে বিয়ে করে থাকেন, তাহলে মেয়ের পিতা মাতা ও অভিভাবকের অনুমতি না থাকলেও বিয়েটা শুদ্ধ হয়ে গেছে।

সুতরাং আপনি মেয়ের সাথে স্ত্রীসূলভ যাবতীয় আচরণ করাই জায়েজ আছে। এতে গোনাহ হবে না।

তবে বিয়ের আগে মেয়ের সাথে যেসব মেলামেশা করেছেন এজন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। খাটি দিলে তওবা করেন। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দিবেন।

৫ ওয়াক্ত নামায জামাতের সাথে আদায় করুন। এলাকার দ্বীনদার ব্যক্তিদের সাথে, আলেম উলামাগণের সাথে সম্পর্ক রাখুন। সেই সাথে দুআ অব্যাহত রাখুন। ইনশাআল্লাহ পাপকর্ম থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন।

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মেয়ে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিভাবকের চেয়ে অধিক হকদার। {মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৮৮৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪২১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮৮৮, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২০৯৮, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২২৩৪, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১০৮, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৩২৬০, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৪০৮৪, সুনানে দারাকুতনী, হাদীস নং-৩৫৭৬}

হযরত সালামা বিনতে আব্দুর রহমান রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক মেয়ে রাসূল সাঃ এর কাছে এল। এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা! কতইনা উত্তম পিতা! আমার চাচাত ভাই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল আর তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এমন এক ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন যাকে আমি অপছন্দ করি। এ ব্যাপারে রাসূল সাঃ তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলে পিতা বলে, মেয়েটি সত্যই বলেছে। আমি তাকে এমন পাত্রের সাথে বিয়ে দিচ্ছি যার পরিবার ভাল নয়। তখন রাসূল সাঃ মেয়েটিকে বললেন, “এ বিয়ে হবে না, তুমি যাও, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করে নাও”। {সুনানে সাঈদ বিন মানসূর, হাদীস নং-৫৬৮, মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১০৩০৪, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫৯৫৩, দিরায়া ফী তাখরীজি আহাদিসীল হিদায়া, হাদীস নং-৫৪১}

হযরত সালামা বিনতে আব্দুর রহমান রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক মেয়ে রাসূল সাঃ এর কাছে এল। এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা! কতইনা উত্তম পিতা! আমার চাচাত ভাই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল আর তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এমন এক ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন যাকে আমি অপছন্দ করি। এ ব্যাপারে রাসূল সাঃ তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলে পিতা বলে, মেয়েটি সত্যই বলেছে। আমি তাকে এমন পাত্রের সাথে বিয়ে দিচ্ছি যার পরিবার ভাল নয়। তখন রাসূল সাঃ মেয়েটিকে বললেন, “এ বিয়ে হবে না, তুমি যাও, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করে নাও”। {সুনানে সাঈদ বিন মানসূর, হাদীস নং-৫৬৮, মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১০৩০৪, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫৯৫৩, দিরায়া ফী তাখরীজি আহাদিসীল হিদায়া, হাদীস নং-৫৪১}

হযরত বুরাইদা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক মহিলা নবীজী সাঃ এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমাকে তার ভাতিজার কাছে বিয়ে দিয়েছে, যাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রাবী বলেন, তখন রাসূল সাঃ বিষয়টি মেয়ের ইখতিয়ারের উপর ন্যস্ত করেন, [অর্থাৎ ইচ্ছে করলে বিয়ে রাখতেও পারবে, ইচ্ছে করলে ভেঙ্গেও দিতে পারবে] তখন মহিলাটি বললেন, আমার পিতা যা করেছেন, তা আমি মেনে নিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল, মেয়েরা যেন জেনে নেয় যে, বিয়ের ব্যাপারে পিতাদের [চূড়ান্ত] মতের অধিকার নেই্ {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৮৭৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহুয়াহ, হাদীস নং-১৩৫৯, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৩৫৫৫}

কিন্তু যারা তওবা করে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তত করে এবং দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সূরা ফুরকান-৭০]

হযরত উবাদা বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

গোনাহ থেকে তওবাকারী এমন,যেন সে গোনাহ করেইনি।