আমার জীবনের কিছু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা আজ আমি আপনার সাথে share করতে যাচ্ছি ।

তার আগে কিছু কথা না বললেই নয় , আপনাদের কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত website "Hubbline" আমার জীবনের গতিপথকে পরিবর্তন করে দিয়েছে । তার জন্য সর্বপরি শুকরিয়া আদায় করছি মহান আল্লাহ্ তায়ালার দরবারে এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাদের এই মহৎ উদ্যোগকে।
 
  গল্পটা শুরু 2020 সালের 4 নভেম্বর। আমি তমা ( ছদ্ম নাম)। আমাদের পরিচয় hubbline এর মাধ্যমে। 6 নভেম্বর থেকে আমরা কথা বলা শুরু করি। এভাবেই শুরু হয় একে অপরকে চেনা, জানা, বোঝার চেষ্টা।
আমার সব কথা (* মেহরাব কে। আমার হাসব্যান্ড এর ছদ্ম নাম) জানিয়েছিলাম। কারণ, সে আমার কাছে unknown ছিল। আমার গল্পগুলা সে জানলে আমার একটুও খারাপ লাগত না। তার সাথে কথা বলার প্রতিটা মুহূর্ত কে আমি উপভোগ করছিলাম কারন সে আমাকে আমার প্রত্যাশা অনুযায়ী গ্রহণ করেছিল।
 
সবই আল্লাহর রহমত ছিল। সে আমার স্বপ্ন, সে আমার সাহস, সে আমার ভালো থাকা, সে আমার চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করার স্থান। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভালো থাকতে চাই তাকে নিয়ে। পরিচয়ের তিন-চারদিন পর থেকে মন থেকেই feel হয় সে আমার soulmate। যার জন্য আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করেছেন। অন্যরকম অনুভূতি ভালোলাগা কাজ করত তার ওপর। প্রতিটা মুহূর্ত তার ভাবনায় মগ্ন থাকতাম। প্রতিদিনই নতুন ভাবে তার প্রেমে পড়তাম। দুজন দুজনকে পছন্দ করলেও কথা বলার শুরুতে আমরা কিছুটা প্রাইভেসি maintain করেছি। পরিচয় এর শুরুতেই আমি তাকে আমার ছবি দেই নাই এবং খুবই ব্যক্তিগত তথ্য দেই নাই। কিছুদিন কথা বলার পর ছবি এবং তথ্য দিয়েছি।
 
আমাদের প্রথম ফোনালাপ হয় দশই নভেম্বর। প্রথমত আমি তার ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়েছি। দ্বিতীয়ত, তার কন্ঠের প্রেমে পড়েছি🥰🥰 । আমাদের মধ্যে অকৃত্রিম ভালোবাসা থাকলেও কথা-কাটাকাটিও কম হতো না। কোনো বিষয় পছন্দ না হলে তর্ক করতে কেউ কাউকে একটুও ছাড়  দিতাম না। আর তারই ফলস্বরূপ একদিন রাত দুইটার পর আমাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয় এবং আমার পরিবার  এটা জেনে ফেলে। ঘটনা এখান থেকেই শুরু । পরদিন সকাল থেকে আমার পরিবার আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয় । এভাবে চলতে থাকে এক সপ্তাহ। তারপর যখন আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না, তখন আমি সিদ্ধান্ত নেই আমার পরিবারকে সব জানাবো । মেহরাবকে বিষয়টা বললে সেও আমাকে অনুমতি দেয়। আল্লাহর ওপর ভরসা করে, দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে পরিবারকে সব কিছু বললাম । মেহরাব ও তার পরিবারের কাছে আমার কথা জানিয়েছে । এই পর্যন্ত সবকিছু খুব সুন্দর ভাবে হয়ে গিয়েছিল । আমার আম্মু মেহরাবের সাথে অনেক কথা সময় বলেছিল , আর আমি মেহরাবের বড় বোন এবং তার মায়ের সাথে কথা বলেছিলাম। প্রথম দিন থেকে এখন পর্যন্ত যা হয়েছিল সবই আল্লাহর রহমত ছিল। আমার পরিবার মেহরাবদেরকে আমাদের বাসায় আসার দাওয়াত দিয়েছিল। এতে আমি এতো খুশি হয়েছিলাম যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। আমাদের পরিকল্পনা ছিল, আমার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার পর পরিবারকে সব কিছু জানাবো। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় খুব সহজভাবে সবকিছু হাতের মুঠোয় চলে আসলো। আমি এবং মেহেরাব দুজনেই খুব খুশি হয়েছিলাম, কারণ আমরা একে অপরকে দেখতে পারবো, কথা বলতে পারবো। আমরা অপেক্ষার প্রহর গুনতে শুরু করলাম, কখন একে অপরকে  সামনা সামনি দেখতে পাবো। এই মুহূর্তটার কথা মনে পড়লে, এখনো মনের অজান্তে চোখের কোনে খুশিতে পানি চলে আসে। এই অনুভূতিগুলো কাউকে বোঝানো যায় না। 
   
   28 নভেম্বর রাতের কথা আমি কখনো ভুলতে পারবো না। কখনো না। এই রাতে আমি,আরো গভীরভাবে বুঝেছিলাম মেহরাব আমাকে কতটা ভালোবাসে, আর আমি তাকে কতটা ভালবাসি। আল্লাহ যেন আমাদের এই ভালোবাসা যুগ যুগ বাঁচিয়ে রাখে । এই প্রার্থনাই করি। আমরা দুজনে সিদ্ধান্ত নিলাম  আমরা বিয়ে করবো যদি আমার পরিবারের সদস্যদের সবাই রাজি থাকে। প্রথমত আল্লাহর ওপর ভরসা আর মেহরাবের উপর অগাধ বিশ্বাস ছিল।  আল্লাহর উপর ভরসা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। প্রতিটা মুহূর্ত নতুন নতুন ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু আল্লাহর উপর ভরসা রেখেই সমাধানের পথ খুঁজেছি। আর আল্লাহ আমাদেরকে সমাধানের পথ দেখিয়েছে। আলহাদুলিল্লাহ।                               
 
    29 তারিখ সকাল থেকেই ছিল শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থ। কি করছি, কেন করছি, আবেগ নাকি সত্যি কারের ভালোবাসা? কিন্তু এত কিছু ভাবার সময় তখন ছিল না। দুজন দুজনকে চাই এটাই ছিল মুখ্য বিষয়। 29 তারিখ রাত গাজিপুর থেকে আমার উদ্দেশ্যে মেহরাব রওনা করেছিল। পৌঁছেছিল পরদিন সকালে। প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ে যাই ।যাকে বলে love at first sight। মোবাইলে মেহরাবের  বাবা মায়ের সাথে কথা বলেছিলাম। তারা আমাকে অনেক সাপোর্ট করেছিল সেই মুহূর্তে। বিয়েতে আমার এতোটুকু hesitation ছিল না। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে কবুল বলে ফেলেছিলাম। 
   
  আলহামদুলিল্লাহ, সব কিছুর জন্য। আল্লাহ যা করেন আমাদের মঙ্গলের জন্য করেন। এখনও পর্যন্ত আমি, আমার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি এবং হাসবেন্ড কে নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো আছি। আল্লাহ আমাদেরকে অনেক ভালো রেখেছেন । আল্লাহর কাছে একটাই প্রার্থনা, আমরা যেন সবসময় ভালো থাকতে পারি। দুজন দুজনকে প্রথম দিন থেকে যেভাবে ভালোবেসেছি মৃত্যুর দিন পর্যন্ত যেন আমরা দুজন দুজনকে সে ভাবে ভালোবাসতে পারি । দুজন দুজনের অবলম্বন হতে পারি।
 সবাই দোয়া করবেন আমাদের জন্য। 
 
এখানে কিছু কথা না বললেই নয় । এই বিষয় গুলো বিবেচনায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত হবে বলে আমি মনে করি।
1. ম্যাট্রিমনিয়াল সাইট হচ্ছে, এমন একটা সাইট যেখানে লাইফ পার্টনার choose করার ক্ষেত্রে অনেক অপশন থাকে । এখানে একজন ব্যক্তি তার পছন্দের মানুষকে খুব সহজে খুঁজে পেতে পারে। 
2. এই সাইটের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার demand গুলো ফিলাপ করতে পারে । একটা পছন্দ না হলে অন্য আরেকটা অপশন কিন্তু থেকেই যায় । এই সাইটের মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে তার পছন্দের সাথে কম্প্রোমাইজ করার সুযোগ নেই।
3. পরিচয়ের সূচনাপর্বে প্রত্যেকেরই উচিত নিজেদের একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য আদান প্রদান থেকে বিরত থাকা।
4. নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ ভালো লাগা, মন্দ লাগা এবং জীবন নিয়ে খোলামেলা কথা বলা। সর্বোপরি অপর ব্যক্তি কে গভীর ভাবে বোঝার চেষ্টা করা।
5. আর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, কোনো সম্পর্কের শুরুতে  সবসময় একে অপরের প্রতি সম্মান এবং ভরসা রাখাটা জরুরী । দুইটা বিষয় যখন আপনি আপনার সম্পর্কের মাঝে রাখতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আপনাদের জন্য ভালো কিছুই করবেন।
6. সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে , আপনার সবথেকে বিশ্বস্ত বা কাছের মানুষের সাথে এ ব্যাপারে একটু আলাপ করে নিবেন । সেটা আপনার পরিবার বা best friend ও হতে পারে । তাহলে আপনার  নিজের মনের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হবে। যেটা আপনার সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে।
এগুলো আমার ব্যক্তিগত মতামত ।আমার মনে হলো আপনাদের সাথে শেয়ার করা উচিত তাই লিখেছি।
 
সর্বশেষ একটা কথাই, Hubbline authority কে বলতে চাই Hubbline এর মাধ্যমে আমি আমার সবথেকে প্রিয় ব্যক্তিত্ব কে খুজে পেয়েছি । তার জন্য Hubbline কে অসংখ্য ধন্যবাদ। দোয়া করবেন আমার এবং আমার পরিবারের জন্য। আল্লাহ হাফেজ।
 
 আসসালামু আলাইকুম।