প্রবাসী মানে কি?

প্রবাসী মানে দাদা-দাদী, নানা-নানী, ভাইবোন আর নিকট আত্মীয়-পরিজনহারা এক অশান্ত, অনিশ্চিত জীবন। প্রবাসী মানে অঢেল অর্থ উপার্জনের কারিগর। প্রবাসী মানে, থাকবে আর্থিক সচ্ছলতা হাড়ভাঙা পরিশ্রমী একদল খেটে খাওয়া মানুষ। প্রবাসী মানে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানের মানবিক মূল্যবোধের মৌলিক আদর্শে একটু হলেও আপোষ করে নেয়া। প্রবাস জীবনে সামাজিক অসঙ্গতি এবং ধর্মীয় আচার-আচরণের অনিয়ম অনিচ্ছাসত্ত্বেও মেনে নেয়া এবং মা- মাটি আর জন্মভূমিকে স্মৃতি রোমন্থন করা। আরও কত কি!

স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী বুক ভরা স্বপ্ন নিয়ে সুখ আর সমৃদ্ধির আশায় স্বপ্নের লীলাভূমি ইউরোপ, উত্তর আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। মূলত ডাইভার্সির্টি পোগ্রামসহ স্টুডেন্ট, ভ্রমণ এবং ব্যবসায়িক ভিসায় এবং পরবর্তীতে চেইন মাইগ্রেশনের সুবাদে লক্ষ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পরিবার-পরিজন নিয়ে বিশ্বের মেগা শহরগুলোতে যেমন নিউইয়র্ক, লসএনজেলেস, ফ্লোরিডা, ফ্রাঙ্কফুর্ট, স্টকহোম, এবং লন্ডনে স্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা সবার জীবনের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা ও পারিবারিক কাঠামো, আর্থিক সামাজিক অবস্থান ভিন্ন হলেও এই জনগোষ্ঠীর মূল লক্ষ পরিবারের আদরের সন্তানের মুখে একমুঠো হাসি ফোটানো। সুখ-শান্তিভরা একটি সফল পরিবার গঠনের আশায় নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে প্রবাস জীবন বেছে নিয়েছেন তাঁরা। ফেলে আসা দুরন্ত শৈশব-কৈশোরের বাঁধনহীন দুরন্তপনা, মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয় স্বজন,পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবের আড্ডা সবকিছুই আজ সোনালী অতীত। হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে যে চাকরিটা আত্মসম্মানের ভয়ে নিজ দেশে করতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন, তার চেয়েও কঠিন চাকরি বিদেশের মাটিতে করে পরিবারের পাশে মানবতার খুঁটি হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা।

নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং মেধাকে কাজে লাগিয়ে অনেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সফল ব্যবসায়ী হিসেবে স্বীকৃতিও পেয়েছেন দেশে-বিদেশে। আবার অনেকে জীবন জীবিকার বেঁচে থাকার সংগ্রামে বৈধ কাগজপত্রের অভাবে বছরের পর বছর নিকট আত্মীয় স্বজনের সাক্ষাতের সুযোগ না পেয়ে হতাশ এবং আতঙ্কিত। মোট জনসংখ্যার অধিকাংশই নিজের শ্রম-মেধাকে অকাতরে বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছেন প্রবাসের মাটিতে। এই বিরতিহীন শ্রম সাধনা এবং কায়িক পরিশ্রমের কতটুকু সার্থকতা পেয়েছেন অভিবাসিত বাংলাদেশি পরিবারগুলো? বিদেশী সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতায় ভিনদেশী ভাষা আর বাংলা ভাষার বিরোধ বৈষম্যতার মাঝে কিভাবে গড়ে তুলছেন নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের? কেমন চলছে তাঁদের ধর্ম-কর্ম, সামাজিক রীতিনীতি,পারিবারিক আতিথেয়তা এবং বাংলা সংস্কৃতির পরিচর্যা? এমন হাজারো প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা নেই!

প্রবাসী সংসার ভাঙনের কারণ কি?

প্রবাসের কর্মময় জীবনে প্রবাসী পরিবারগুলোর সার্বিক কাঠামো, সুস্থ জীবন-দর্শন,পরস্পরের সম্পর্কের মেলবন্ধন কতটুকু শক্তিশালী এবং গতিময়? প্রতিদিনের জীবন যাত্রার মান কতটুকু মানসমৃদ্ধ এবং উন্নত? কেন ভেঙে যাচ্ছে ঘর-সংসার? কারা ভাঙছে অতি যত্নের গড়ে তোলা প্রবাসী স্বামী-স্ত্রীর ছোট্ট সুখের নীড়? এক স্বপ্ন দেখা যুবকের শ্রমসাধ্য উপার্জনের তিল তিল করে সঞ্চিত অর্থে দেশে বিয়ে করা স্ত্রীর সঙ্গে প্রবাসের নতুন সংসার-ধর্ম শুরু করেন। নিয়তির খেলাঘরে কোন এক সময় স্বামী স্ত্রীর মধুর সম্পর্কের তিক্ততা আর ঘৃণা বাড়তে বাড়তে ভেঙে যায় সংসার। ভেঙে যাওয়া সংসারের হাল ছেড়ে স্বামী যখন সঙ্গিহীন দিশেহারা, তখন স্ত্রী আবেগের তাড়নায় পরকীয়ার মিথ্যা মায়ার জালে জড়িয়ে অর্থ-প্রতিপত্তির লোভে নতুন সংসারে আবদ্ধ হন।

এমনও ঘটনা রয়েছে যে স্বামী তার সন্তান হারিয়ে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন এবং নিরুপায় হয়ে নিজেকে লোক চক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে রেখেছেন। সম্পর্কহীন জীবন আজ স্বপ্নের প্রবাসে নিঃসঙ্গ, নিস্তব্ধ করে রেখেছে তাঁকে। জীবনের কর্মক্লান্তি এবং একাকীত্ব তিলে তিলে ধ্বংস করে দিচ্ছে শরীর মন দুটোই। স্বামী-স্ত্রীর কান্নার আওয়াজটা চার দেয়ালের মাঝেই চাপা পড়ে আছে। অনেক দম্পতিই শোক দুঃখের গ্লানি নিয়ে একটি দৃশ্যমান কারাগারের অন্তরীণ থাকার বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছেন। ক্ষেত্র বিশেষে দেখা যায়,স্বামীর আর্থিক দুর্বলতার সুযোগে স্ত্রী পর-পুরুষের হাত ধরে নতুন করে সংসার পেতেছেন।

কমিউনিটিতে কিছু ভণ্ড অসৎ মানুষের উস্কানি ও কু-প্ররোচনায় সরল নিরীহ মহিলারা বিপথগামী এবং ভুল পথে পা বাড়িয়ে নিজের পরিবারকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। তাছাড়া এই সকল ঘুণে ধরা নষ্ট মানুষেরা সংক্রামক ব্যাধির মত পরিবারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ফাটল সৃষ্টি করছে। আবার দেশের নিকট আত্মীয়-স্বজনদের সরাসরি প্রভাবও স্বামী- স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতির আরেকটি মূল কারণ।

আরও দেখা যায়, স্বামী যখন সংসারের একমাত্র উপার্জনের উৎস এবং বেশিরভাগ সময়ে কর্মব্যস্ততার কারণে পরিবারকে মূল্যবান সময় না দেওয়ায় সংসারে অশান্তি, ভুল বুঝাবুঝি ও প্রতিনিয়ত পারিবারিক দ্বন্দ্ব লেগেই থাকে। যদিও বিদেশে ব্যক্তি স্বাধীনতায় সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং জবাবদিহিতার কোন সুযোগ নেই। সমান অধিকার  আর সাম্যবাদের আষ্টেপৃষ্ঠে নারী-পুরুষ দুজনেই স্বাধীন নিরপেক্ষভাবে সবকিছু উপভোগ করেন।

অবাধ ব্যক্তি স্বাধীনতা আর স্বেচ্ছাচারিতা পরিবারের সদস্যদের ভিতর দ্বিমুখী মনোভাবের সৃষ্টি হয় এবং সেই কারণে অপরিচিত মানুষের সঙ্গে অবাধ মেলামেশার সুযোগ বেড়ে যায়। যার ফলস্বরূপ নিজেদের ভিতর অবিশ্বাস, আত্মঅহমিকা এবং পরস্পরের শ্রদ্ধা ভালোবাসা হারিয়ে পারিবারিক ঝগড়া বিবাদ যেন নিত্যদিনের ঘটনা। পরিণতিতে পরিবার ভাঙ্গন এবং পারিবারিক জটিলতা এক পর্যায়ে আইন-আদালত এমনকি জেল-হাজত পর্যন্ত গড়ায়। আবার কিছু সংখ্যক পরিবার মাত্রাতিরিক্ত স্বাধীনতার সুযোগের নিজ কমিউনিটি থেকে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে বসবাস করছেন।

বিদেশী ভাষা, বৈরি শিষ্টাচার অনুকরণ করতে গিয়ে নিজের সন্তানের প্রতি দায়িত্বহীন এবং বেখেয়াল হয়ে পড়ছেন এবং স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের ভাঙনে অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের ভরণপোষণ আর লালন-পালনের দায়িত্ব ভাগাভাগি করতে আইনের আশ্রয়ও নিতে হচ্ছে অনেক বাবা-মাকে। বাবা-মায়ের ভুল বুঝাবুঝিতে ভেঙে যাওয়া সংসারের ছেলেমেয়েরাও পৃথক হয়ে নিজের মত করে ঘরসংসার শুরু করছে। এমনও দেখা যায় বাবা-মা দু'জনের পারস্পরিক ভুল বুঝাবুঝিতে এই নিরীহ পরিবারগুলো অস্তিত্বের হুমকিতে পড়ছে। তড়িৎ গতিতে ভেঙে যাচ্ছে ঘরসংসার এবং পারিবারিক কাঠামো।

দাম্পত্য জীবনে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, ভালোবাসা ও আস্থার বদলে অবিশ্বাস সন্দেহ, সংশয় আর লোভ জায়গা করে নিচ্ছে। পারিবারিক দ্বন্দ্ব-কলহ এবং ভুল বুঝাবুঝির সহনীয় পর্যায়ে না থাকার কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ, দাম্পত্য কলহের ঘটনা বাড়ছে দিন দিন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের মধ্যে নৈতিকতাবোধ ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনার মহাকাব্যে পরিবারের প্রত্যেকেরই যথেষ্ট অবদান থাকে। সম্পর্কের বিবেচনায় তা যাই হোক না কেন? পরিবার মানেই ভালোবাসার অটুট বন্ধন। বাইরের পৃথিবীর নানা জ্বালা-যন্ত্রণা, অভাব-অভিযোগের বাইরে নিজের সদস্যদের নিয়ে ভেতরের পৃথিবী।

নতুন প্রজন্মের সংকট এবং উত্তরণের পথ কি?
ইদানিং বিদেশি সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট বাবা-মা তাঁর সন্তানদের বাংলা ভাষাও সংস্কৃতি শিখাতে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন। শুদ্ধ উচ্চারণ সমৃদ্ধ বাংলাভাষায় কথাবলা এবং লেখার জন্য সন্তানদের অনীহাও ভয়ানক আকার ধারণ করছে। পাশাপাশি কমিউনিটিতে নেতৃত্বের সংকট এবং উপযুক্ত দিক নির্দেশনা বা গাইড লাইনের যথেষ্ট অভাব। একজন দায়িত্ব সচেতন আদর্শিক নেতার বড়ই প্রয়োজন যিনি প্রবাসী বাংলাদেশী পরিবারগুলোকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে সফল হওয়ার পথ নির্দেশনা দিবেন। কমিউনিটির বিপদে আপদে স্বার্থহীন ভাবে কাজ করবেন। ধর্ম-বর্ণ, গোত্র বিশেষে আমরা যদিও নিজেদের স্যাকুলার দাবী করি কিন্তু রাজনৈতিক দলাদলি, সভা সমিতি আর হাজারো মতানৈক্যের রেশ ধরে প্রবাসী কমিউনিটির মাঝে জগরা মারামারি লেগেই আছে। কোন গঠনমূলক আলোচনার সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর লক্ষ্যে একতাবদ্ধ হতে পারেন না কেউ। বিভিন্ন সমিতি যেমন ডা. সমিতি, ইঞ্জিনিয়ার সমিতি, ব্যবসায়ী সমিতির নামে নিজেরা নিজেদের পৃথক পৃথক পরিচয়ে কমিউনিটির পরিবারগুলো নিজ দেশ ও জাতির মূল শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন।

প্রবাসে নিজস্ব ভাষা সংস্কৃতি-কৃষ্টি এবং নিজ নিজ ধর্মীয় মূল্যবোধের জায়গাতে সন্তানদের মানুষ করা এক ধরনের গৃহযুদ্ধের মত। তার মাঝে বাবা-মায়ের সম্পর্কের অবনতি। সেই সুযোগে তাদের সন্তানেরা জাতি-ধর্ম নির্বিচারে মেলামেশা শুরু করে দেয়। এই দ্বৈত জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছেলে-মেয়েরা বাবা-মার কাছে সত্য লুকিয়ে রাখে এক পর্যায়ে প্রচণ্ড নিঃসঙ্গতায় ভুগতে ভুগতে ভুল পথে পা বাড়ায়।

প্রথম প্রজন্মের বাংলাদেশিরা একদিকে যেমন জীবন আর বাস্তবতার সাথে বেঁচে থাকার লড়াই, অন্যদিকে ধর্ম আর সংস্কৃতিকে লালন করতে গিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বৈষয়িক শিক্ষায় মেধাতালিকার শীর্ষে প্রবাসী ছেলে-মেয়েরা বাবা-মা দুজনের সমান স্নেহ-মমতা, ভালোবাসা আর সঠিক গাইড লাইন না পেয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে। এই সমস্যাগুলো প্রকট আকার ধারণ করছে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। বাবা-মা যখন ছেলে মেয়েদের পছন্দের জীবন ধারণের পদ্ধতিগুলো কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তখন শুরু হয় দ্বিমত আর পরস্পর বিরোধী সংঘাতের। ছেলে মেয়ে অপ্রাপ্ত বয়সেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। বাবা-মাও নিরুপায় এবং দিশেহারা।

কমিউনিটিতে দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের বিয়ে সংক্রান্ত জটিলতা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। ছেলে মেয়ে উভয়ের পছন্দের উপযুক্ত পাত্র-পাত্রী খুঁজে পাওয়া যায় না। ছেলে মেয়েরা নিজেরা যদি নিজেদের উপযুক্ত জীবন সঙ্গী সঠিক সময়ে খুঁজে নিতে না পারলে সেটা অভিভাবকদের জন্য একটা বড় ধরনের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাড়ায়। ঠিক একই সময়ে এই প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের পারিবারিক এবং ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবে তাদের সংসার টিকিয়ে রাখাও দুরূহ হয়ে পড়েছে।

সংসারের ভাঙন রোধের উপায় কি?
প্রবাসে সংসার ভাঙন রোধের কোন প্রতিষেধক এখনো আবিষ্কৃত হয়নি কিন্তু মানুষের বিশ্বাস, পারিবারিক ঐতিহ্য, ধর্ম আর নিজের শিক্ষা আর মানবিক চিন্তাচেতনার উপর  নির্ভর করে পারিবারিক বন্ধন আর সংসারে সুখ। সমাজে স্বার্থপর মানুষের সংখ্যাই বেশি।  কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর বন্ধুত্বের মাঝে স্বার্থপরতার রেশ থাকবে কেন? দু'জনই পরিবারের যথোপযুক্ত দায়িত্বের ভার গ্রহণ করবে এটাই স্বাভাবিক। কোন ব্যক্তি তখনই সুখী থাকেন যখন তিনি তাঁর জীবন সঙ্গী একমত থাকেন। কোন বিষয়ে মন খুলে কথা বলার ক্ষেত্রে সাদৃশ্য থাকা এবং মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মিল থাকা। এতে দম্পতির দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মন কষাকষির আশংকা কম থাকে। খোলামেলা ও স্বাধীন ভাবে মন খুলে কথা বলার মত সঙ্গী যখন একই গুরুত্ব দেখান তখন নারী ও পুরুষ উভয়ই সুখী হন। পরিবারে স্বামী -স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসার সাথে সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, পারস্পরিক সমঝোতা,  একে অপরের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও গভীর করার জন্য প্রয়োজন সহনশীলতা। একজন সহনশীল নারী-পুরুষেই পারেন পরিবারের কঠিন বলয়ে বিমূঢ় বাস্তবতার ভিতরে পরিবারকে শক্ত হাতে সযত্নে লালন করতে। ধৈর্যশীল নারী-পুরুষই পারেন সুখ আর শান্তির নিড় গড়ে তুলতে।

কমিউনিটির নৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য
বিদেশের মাটিতে পারিবারিক কাঠামো তৈরিতে উপযুক্ত পরিবেশ এবং সরকারি উদ্যোগে সরকারি দূতাবাসের প্রতিনিধিরাও কোন গঠনমূলক কার্যক্রম করতে পারছেন না। হয়ত তাঁদের সীমিত লোকবল বাস্তবিক অভিজ্ঞতার জায়গাটিও ভিত শক্তিশালী নয়। একটি সফল পরিবার এবং সুখী দম্পতি গড়ে তুলতে এবং এই সমাজে টিকে থাকার সঠিক এবং উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। কমিউনিটিতে পরস্পরের সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতির মেরুবৃত্ত তৈরি করতে হবে। ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কমিউনিটি সেন্টার একান্তই দরকার। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থের একটা বিশেষ অংশ রেমিট্যান্স হিসেবে দেশে পাঠানো হয়। অথচ সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে পরিপূর্ণ ব্যাংকিং এর কোন  ব্যবস্থা কমিউনিটিতে নেই। কারিগরি শিক্ষাসহ স্বল্পমেয়াদী চিকিৎসা বিষয়ক ভোকেশনাল ট্রেনিং এর সুযোগ হলে প্রবাসী পরিবারের আর্থিক সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন এবং মজবুত হবে বলে আমার বিশ্বাস।

একটা পরিবারের সবাই যখন সবরকম জ্ঞানের শাখা প্রশাখার ভিতরে ঘুরে বেড়ায়; তখন সেই পরিবার জ্ঞানের আলোয় বিস্ফোরিত হতে থাকে। জ্ঞান সমৃদ্ধ সেই পরিবারটি বিকশিত হবে। দেশে হোক, প্রবাসে হোক সার্থক করে তুলবে নতুন প্রজন্ম। আমার সোনার মাটির সোনার মানুষগুলো বাংলায় কথা বলবে, কুশল বিনিময় করবে। বাংলা গান ও সংস্কৃতির চর্চা করবে। গর্ব এবং গৌরবের সাথে লাল-সবুজের পতাকা বহন করবে। পরিবার পরিজন নিয়ে প্রবাসে সুখের জীবন-যাপন করবে। আর্থিক সচ্ছলতার উন্নতি সাধন করবে। ভিনদেশের মাটিতে নিজেরা মাথা উঁচু করে সাহসের সাথে, আত্ম তৃপ্তির সাথে আগামী দিনের পথ পরিক্রমায় এগিয়ে যাবে। স্বামী-স্ত্রীর সংসার ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা বন্ধ হবে। সময়ের সাক্ষী, কালের সাক্ষী হয়ে একটি শক্তিশালী স্বনির্ভর বাংলাদেশী কমিউনিটি প্রতিষ্ঠা লাভ করবে এই আমাদের চাওয়া পাওয়া। আমাদের স্বপ্ন। আর কিছু নয়।